Thursday, February 27, 2020

একটি বিয়ে কি রকম হওয়া চাই..???

বিয়ের সময় অতি তাড়াহুড়ো করবেন না।
কারো লেবাস দেখে অথবা সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে কাউকে যাচাই করবেন না।

কেননা  একটি বিয়ে একটি জিবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। ভালোভাবে যাচাই করুন। অমানুষেরা তো মানুষের বেশ ধরেই হাঁটা-চলা করে।

মাথা ঝনঝন করছে লেখাটা পড়ে।
পুরো গল্পটা পড়ুন।
আমার জিবনের গোপন কান্না।

----------------------------------------------------------------------

ছেলে ১৭ বছর যাবত তাবলীগে সময় দেয়। কোন বছরই তার চিল্লার নেসাব মিস্ হয়নি। জামাতে বের হলে সর্বদা মাথায় পাগড়ি থাকে। আমার বড় বোনকে দেখতে এসেই পছন্দ করে।

আমাদের সবাইকে বলে, সে বিয়ের জন্য আগেও কয়েকজন পাত্রী দেখেছে। কিন্তু কোথাও অগ্রসর হয়নি। কারণ সে কয়েক বছর যাবৎ স্বপ্নে তার জীবনসঙ্গিনীকে দেখে আসছে। আমার বোনকে দেখার পরই তার মনে হয়েছে, আমার বোনই তার স্বপ্নে দেখা সেই জীবনসঙ্গিনী! আমার সামনেই কথাগুলো বলে সে।

তারপর নানারকম ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে খুব তড়িঘড়ি করে ইজতিমার ময়দানে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে সে। বিয়ের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ছেলে আমাদের কাছে কিছুদিনের সময় চেয়েছিল। সে নিজের জায়গায় বাড়ি বানাচ্ছে। খুব শীঘ্রই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলেই অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিবে।
বলে রাখা ভালো। ছেলের বাবা এই বিয়েতে সন্তুষ্ট ছিল না। কারণ তার ইচ্ছে ছিল মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে ছেলেকে বিয়ে করাবে। এটা জানার পর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অগ্রসর হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু কপালের লিখন!
তাবলীগের মুরুব্বিরা বারবার একটি কথাই বলছিলেন, ছেলে দ্বীনদার, প্রতিষ্ঠিত। এই পরিস্থিতিতে ছেলের বাবার এই ভুলের কারণে আমরা অগ্রসর না হলে আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব!?

যাক, বিয়ে তো হয়েই গেল। ছেলে এক দুই সপ্তাহ পরপর আমাদের বাসায় আসত। কিছুদিন না, কয়েক মাস কেটে গেলেও তার বাড়ি করা আর কমপ্লিট হয়না! হঠাৎ একদিন আব্বুর কাছে 'করজে হাসানাহ' হিসেবে বেশ কিছু টাকা চাইল।
কারণ হিসেবে বলল, টাকার জন্যই বাড়ির কাজ শেষ হচ্ছেনা।
আব্বু তাকে টাকা দিলেন। তারপর আরো কয়েক মাস কেটে গেল। তবুও তার বাড়ির কাজ শেষ হয়না। এই সময়টায় সে আমার বোনের জন্য এক টাকাও খরচ দেয়নি। বাবার বাড়িতে থাকলে নাকি স্বামীর দায়িত্বে থাকেনা। যাক, এটা নিয়েও আমরা বাড়াবাড়ি করিনি। ধীরে ধীরে অনেক কিছুই টের পেলাম। আপুর সঙ্গে নিয়মিত খারাপ ব্যবহার করত। বাবু পেটে আসার পর আপু অসুস্থ থাকতেন, এজন্য তাকে প্রতিবন্ধী বলে উপহাস করত।

আপুর সাথে তার খারাপ আচরণের ব্যাপারটা আমাদের জানতে অনেক সময় লাগে। কারণ আপু নিজে থেকে কিছু জানায়নি।

আল্লাহ তাআলা আমার আপুকে একটি কন্যা সন্তান দান করলেন। আমরা ভেবেছিলাম বাচ্চা হলে লোকটি ভালো হয়ে যাবে। অথচ বাচ্চা হওয়ার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে গেল। এভাবেই কেটে গেল তেইশ মাস! তখনো তার বাড়ি করা শেষ হয়নি! এই ছেলের ধোঁকাবাজি স্পষ্ট হতে আর কী দেখতে হবে? আমি আর আমার আব্বু ছেলের সঙ্গে বসলাম। আব্বু এবার খুবই সিরিয়াস হয়ে গেলেন। তাকে যখন বললেন, তুমি বাড়ির কাজ শেষ করার জন্য আরো দেড় বছর আগে আমার থেকে টাকা ধার নিলে। এখনও তুমি কাজ শেষ করতে পারলে না? এভাবে আর কতদিন। তোমার অভিভাবকদের সঙ্গে বসে এটার একটা সুরাহা করা ছাড়া তো অন্য উপায় দেখতে পাচ্ছি না।

তখনই ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যেটার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলে উঠলো, কীসের টাকা? আপনারা কবে আমাকে টাকা দিলেন? আব্বু থমকে গেলেন! আব্বু বললেন, তুমি কুরআন ছুঁয়ে বলতে পারবে টাকা ধার নাওনি? সে কুরআন ছুঁয়েও বলতে চাইল! তখন তার অভিভাবক আর তাবলীগের সেই মুরুব্বীদের ডাকা হল। সবাই তাকে খুব গালমন্দ করল। তেইশ মাসেও তারা কেন মেয়ে উঠিয়ে নেয়নি?

কেন বউ বাচ্চার কোনো খরচ বহন করেনি? এসব কিছুর পরও আব্বুর একটা দাবি ছিল। টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবেনা। কিন্তু সবার সামনে তাকে স্বীকার করতে হবে যে, সে টাকাগুলো ধার হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু, কী বলব! সে কোনোভাবেই স্বীকার করল না। মিথ্যার উপর অটল থাকলো। আর কী বলার আছে?

ইতিপূর্বেও সে অনেক মিথ্যা বলেছে। আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করে থেকেছি। আমার আব্বু, আম্মু, বোন তারা সরল। ফিতনাহের এই কঠিন যামানায় এতটা সরল থাকতে নেই। দশ বছর আগের ঘটনা লিখলাম। ভাগ্নির বয়স এখন নয় বছর চলে। সে তেরো পারা কুরআন হিফজ শেষ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ্
এই নয় বছরে একবারের জন্য লুকিয়েও সেই অমানুষটা তার মেয়েকে দেখতে আসেনি! আমার ভাগ্নিটা জানেনা তার বাবা কেমন? মানুষরূপী এক অমানুষ তার বাবা। ভাগ্নির কথা ভেবে জীবনে অনেক কেঁদেছি। এখনো কাঁদি। আমার বোনটার কথা আর কী বলব? স্বামীর ভালোবাসা কী জিনিস সেটা বোঝার সৌভাগ্য তার হলোনা। বিয়ে হল, সন্তান হল, বাবার বাড়িতে থেকেই। স্বামীর বাড়ি বানানো হল না। নিজের ঘর ভেঙ্গে গেল!

প্রতিটি মানুষের একটি দুর্বলতা থাকে। আমার দুর্বলতা আমার এই হতভাগা বোনটা। প্রতারণার স্বীকার হয়ে নিজের মেয়েকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘ একটা সময় তার দাবি ছিল, কেউ তাকে বিয়ে করলে মেয়েকে সহ তাকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আফসোসের কথা কী বলব? এমন কত মানুষ বিয়ের আগ্রহ দেখালো যাদের নিজের অন্য ঘরের সন্তান আছে। এই সন্তানকে আমার বোন মেনে নিলেও সে অন্য ঘরের আমার বোনের মেয়েকে মানতে পারবেনা। এটা মেনে নেওয়া যায়না!

অনেক তো লুকোচুরি করলাম। গোপনে গোপনে অনেককেই বলেছি, ভাই! আমার বোনের জন্য একটা ছেলে দেইখেন প্লিজ!

বেশি কিছু চাইনা। একটা ভালো মানুষ চাই। আমার নিঃসঙ্গ বোনের জন্য একজন জীবনসঙ্গী চাই। অজানা এক কারণে সেরকম কাউকে খুঁজে পেলামনা। এভাবেই হয়তোবা আমাদের চোখের সামনে আমাদের বোনের জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।

কী হবে আর লজ্জা করে? আল্লাহ সাক্ষী। তিনি তো জানেন আমাদের কোন দায় ছিলো না। কান্নাকাটি তো কম করলাম না। আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিয়েই তো দিনাতিপাত করে যাচ্ছি।

সত্যি বলতে আমাদের এই সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। দশটা ছেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা অবিবাহিত (!) মেয়েকে বিয়ে করার মত ছেলের অভাব হয়না। তবে কোন মেয়ের যদি একবার বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে যায়,তখন তাকে বিয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যায়!

মুহাব্বাতের কিছু ভাই আছেন আমার। দীর্ঘ সময়ের পরিচয়।

কষ্টের এই কথাগুলো কোনদিন আপনাদের বলা হয়নি। আজ ব্যথাতুর ভগ্ন হৃদয়ে জীবনের এই দুঃসহ ট্রাজেডির কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। লিখতে যেয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলাম। কখনো কখনো চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। সত্যি বলতে সহমর্মিতা নয়, একটু সহোযোগিতার আশায় আজ সব খুলে বললাম। অন্তত দুআয় স্মরণ রাখতে ভুলবেননা ভাই।


আপনার মন্তব্য  জানাতে ভুলবেন না...

No comments:

Post a Comment

একটি বিয়ে কি রকম হওয়া চাই..???

বিয়ের সময় অতি তাড়াহুড়ো করবেন না। কারো লেবাস দেখে অথবা সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে কাউকে যাচাই করবেন না। কেননা  একটি বিয়ে একটি জিবনের মোড়...