Thursday, February 27, 2020

একটি বিয়ে কি রকম হওয়া চাই..???

বিয়ের সময় অতি তাড়াহুড়ো করবেন না।
কারো লেবাস দেখে অথবা সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে কাউকে যাচাই করবেন না।

কেননা  একটি বিয়ে একটি জিবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। ভালোভাবে যাচাই করুন। অমানুষেরা তো মানুষের বেশ ধরেই হাঁটা-চলা করে।

মাথা ঝনঝন করছে লেখাটা পড়ে।
পুরো গল্পটা পড়ুন।
আমার জিবনের গোপন কান্না।

----------------------------------------------------------------------

ছেলে ১৭ বছর যাবত তাবলীগে সময় দেয়। কোন বছরই তার চিল্লার নেসাব মিস্ হয়নি। জামাতে বের হলে সর্বদা মাথায় পাগড়ি থাকে। আমার বড় বোনকে দেখতে এসেই পছন্দ করে।

আমাদের সবাইকে বলে, সে বিয়ের জন্য আগেও কয়েকজন পাত্রী দেখেছে। কিন্তু কোথাও অগ্রসর হয়নি। কারণ সে কয়েক বছর যাবৎ স্বপ্নে তার জীবনসঙ্গিনীকে দেখে আসছে। আমার বোনকে দেখার পরই তার মনে হয়েছে, আমার বোনই তার স্বপ্নে দেখা সেই জীবনসঙ্গিনী! আমার সামনেই কথাগুলো বলে সে।

তারপর নানারকম ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে খুব তড়িঘড়ি করে ইজতিমার ময়দানে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে সে। বিয়ের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ছেলে আমাদের কাছে কিছুদিনের সময় চেয়েছিল। সে নিজের জায়গায় বাড়ি বানাচ্ছে। খুব শীঘ্রই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলেই অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিবে।
বলে রাখা ভালো। ছেলের বাবা এই বিয়েতে সন্তুষ্ট ছিল না। কারণ তার ইচ্ছে ছিল মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে ছেলেকে বিয়ে করাবে। এটা জানার পর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অগ্রসর হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু কপালের লিখন!
তাবলীগের মুরুব্বিরা বারবার একটি কথাই বলছিলেন, ছেলে দ্বীনদার, প্রতিষ্ঠিত। এই পরিস্থিতিতে ছেলের বাবার এই ভুলের কারণে আমরা অগ্রসর না হলে আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব!?

যাক, বিয়ে তো হয়েই গেল। ছেলে এক দুই সপ্তাহ পরপর আমাদের বাসায় আসত। কিছুদিন না, কয়েক মাস কেটে গেলেও তার বাড়ি করা আর কমপ্লিট হয়না! হঠাৎ একদিন আব্বুর কাছে 'করজে হাসানাহ' হিসেবে বেশ কিছু টাকা চাইল।
কারণ হিসেবে বলল, টাকার জন্যই বাড়ির কাজ শেষ হচ্ছেনা।
আব্বু তাকে টাকা দিলেন। তারপর আরো কয়েক মাস কেটে গেল। তবুও তার বাড়ির কাজ শেষ হয়না। এই সময়টায় সে আমার বোনের জন্য এক টাকাও খরচ দেয়নি। বাবার বাড়িতে থাকলে নাকি স্বামীর দায়িত্বে থাকেনা। যাক, এটা নিয়েও আমরা বাড়াবাড়ি করিনি। ধীরে ধীরে অনেক কিছুই টের পেলাম। আপুর সঙ্গে নিয়মিত খারাপ ব্যবহার করত। বাবু পেটে আসার পর আপু অসুস্থ থাকতেন, এজন্য তাকে প্রতিবন্ধী বলে উপহাস করত।

আপুর সাথে তার খারাপ আচরণের ব্যাপারটা আমাদের জানতে অনেক সময় লাগে। কারণ আপু নিজে থেকে কিছু জানায়নি।

আল্লাহ তাআলা আমার আপুকে একটি কন্যা সন্তান দান করলেন। আমরা ভেবেছিলাম বাচ্চা হলে লোকটি ভালো হয়ে যাবে। অথচ বাচ্চা হওয়ার পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে গেল। এভাবেই কেটে গেল তেইশ মাস! তখনো তার বাড়ি করা শেষ হয়নি! এই ছেলের ধোঁকাবাজি স্পষ্ট হতে আর কী দেখতে হবে? আমি আর আমার আব্বু ছেলের সঙ্গে বসলাম। আব্বু এবার খুবই সিরিয়াস হয়ে গেলেন। তাকে যখন বললেন, তুমি বাড়ির কাজ শেষ করার জন্য আরো দেড় বছর আগে আমার থেকে টাকা ধার নিলে। এখনও তুমি কাজ শেষ করতে পারলে না? এভাবে আর কতদিন। তোমার অভিভাবকদের সঙ্গে বসে এটার একটা সুরাহা করা ছাড়া তো অন্য উপায় দেখতে পাচ্ছি না।

তখনই ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যেটার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলে উঠলো, কীসের টাকা? আপনারা কবে আমাকে টাকা দিলেন? আব্বু থমকে গেলেন! আব্বু বললেন, তুমি কুরআন ছুঁয়ে বলতে পারবে টাকা ধার নাওনি? সে কুরআন ছুঁয়েও বলতে চাইল! তখন তার অভিভাবক আর তাবলীগের সেই মুরুব্বীদের ডাকা হল। সবাই তাকে খুব গালমন্দ করল। তেইশ মাসেও তারা কেন মেয়ে উঠিয়ে নেয়নি?

কেন বউ বাচ্চার কোনো খরচ বহন করেনি? এসব কিছুর পরও আব্বুর একটা দাবি ছিল। টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবেনা। কিন্তু সবার সামনে তাকে স্বীকার করতে হবে যে, সে টাকাগুলো ধার হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু, কী বলব! সে কোনোভাবেই স্বীকার করল না। মিথ্যার উপর অটল থাকলো। আর কী বলার আছে?

ইতিপূর্বেও সে অনেক মিথ্যা বলেছে। আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করে থেকেছি। আমার আব্বু, আম্মু, বোন তারা সরল। ফিতনাহের এই কঠিন যামানায় এতটা সরল থাকতে নেই। দশ বছর আগের ঘটনা লিখলাম। ভাগ্নির বয়স এখন নয় বছর চলে। সে তেরো পারা কুরআন হিফজ শেষ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ্
এই নয় বছরে একবারের জন্য লুকিয়েও সেই অমানুষটা তার মেয়েকে দেখতে আসেনি! আমার ভাগ্নিটা জানেনা তার বাবা কেমন? মানুষরূপী এক অমানুষ তার বাবা। ভাগ্নির কথা ভেবে জীবনে অনেক কেঁদেছি। এখনো কাঁদি। আমার বোনটার কথা আর কী বলব? স্বামীর ভালোবাসা কী জিনিস সেটা বোঝার সৌভাগ্য তার হলোনা। বিয়ে হল, সন্তান হল, বাবার বাড়িতে থেকেই। স্বামীর বাড়ি বানানো হল না। নিজের ঘর ভেঙ্গে গেল!

প্রতিটি মানুষের একটি দুর্বলতা থাকে। আমার দুর্বলতা আমার এই হতভাগা বোনটা। প্রতারণার স্বীকার হয়ে নিজের মেয়েকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। দীর্ঘ একটা সময় তার দাবি ছিল, কেউ তাকে বিয়ে করলে মেয়েকে সহ তাকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আফসোসের কথা কী বলব? এমন কত মানুষ বিয়ের আগ্রহ দেখালো যাদের নিজের অন্য ঘরের সন্তান আছে। এই সন্তানকে আমার বোন মেনে নিলেও সে অন্য ঘরের আমার বোনের মেয়েকে মানতে পারবেনা। এটা মেনে নেওয়া যায়না!

অনেক তো লুকোচুরি করলাম। গোপনে গোপনে অনেককেই বলেছি, ভাই! আমার বোনের জন্য একটা ছেলে দেইখেন প্লিজ!

বেশি কিছু চাইনা। একটা ভালো মানুষ চাই। আমার নিঃসঙ্গ বোনের জন্য একজন জীবনসঙ্গী চাই। অজানা এক কারণে সেরকম কাউকে খুঁজে পেলামনা। এভাবেই হয়তোবা আমাদের চোখের সামনে আমাদের বোনের জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।

কী হবে আর লজ্জা করে? আল্লাহ সাক্ষী। তিনি তো জানেন আমাদের কোন দায় ছিলো না। কান্নাকাটি তো কম করলাম না। আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিয়েই তো দিনাতিপাত করে যাচ্ছি।

সত্যি বলতে আমাদের এই সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। দশটা ছেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা অবিবাহিত (!) মেয়েকে বিয়ে করার মত ছেলের অভাব হয়না। তবে কোন মেয়ের যদি একবার বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে যায়,তখন তাকে বিয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে যায়!

মুহাব্বাতের কিছু ভাই আছেন আমার। দীর্ঘ সময়ের পরিচয়।

কষ্টের এই কথাগুলো কোনদিন আপনাদের বলা হয়নি। আজ ব্যথাতুর ভগ্ন হৃদয়ে জীবনের এই দুঃসহ ট্রাজেডির কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। লিখতে যেয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলাম। কখনো কখনো চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। সত্যি বলতে সহমর্মিতা নয়, একটু সহোযোগিতার আশায় আজ সব খুলে বললাম। অন্তত দুআয় স্মরণ রাখতে ভুলবেননা ভাই।


আপনার মন্তব্য  জানাতে ভুলবেন না...

Tuesday, February 25, 2020

নারী এবং পুরুষের নামাযে পার্থক্য


নারী এবং পুরুষের নামাযে পার্থক্য -- ১
----------------------------------------------
.
নারী -পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন--
১. পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
২. ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
৩. ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
৪. হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
৫. পুরুষের উপর জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।
৬. নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষকে তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
৭. ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারে না।
৮. আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
৯. পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
১০. পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।
.
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদতসমূহের অন্যতম হল নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশি রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাঃ-এর হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে। প্রথমে আমরা সহীহ হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করছি।
.
✡ হাদীস
.
১.
3016 – أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل (سنن الكبرى للبيهقى، كتاب الحيض، باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود، رقم الحديث-3016)
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন, একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন, “যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)
.
প্রসিদ্ধ আহলে হাদীস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০)-তে লিখেছেন, “উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য।"
.
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।
.

وَالآخَرُ حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ : الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছন, “মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে, যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন, ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।" (সুনানে বায়হাকী,-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪)
এই হাদিসটি হাসান।
.

حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي قال حدثتني ميمونة بنت عبد الجبار بن وائل بن حجر عن أبيها عبد الجبار عن علقمة عمها عن وائل بن حجر قال : جئت النبي صلى الله عليه و سلم ………….فقال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها (المعجم الكبير، باب الواو، وائل بن حجر الحضرمي القيل، رقم الحديث-28)
ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন, আমি নবীজী সা.-এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল-মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২৮)
এই হাদিসটিও হাসান।
.
উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২ নং হাদিসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপপোযী। উল্লেখ্য যে, এই সব হাদিসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদিস আছে। পক্ষান্তরে এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবে না যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন। এ কথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।
নারী এবং পুরুষের নামাযে পার্থক্য -- ২
----------------------------------------------
✡ সাহাবায়ে কিরামের ফাতাওয়া
.

5072 – عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق، كتاب الصلاة، باب تكبير المرأة بيديها وقيام المرأة و ركوعها وسجودها، رقم الحيث-5072)
আলী রা. বলেছেন, মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২; মুসান্নাফে ইবনে শাইবা, ২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩; সুনানে কুবরা বায়হাকী, ২/২২২)
.

حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2794)
ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞেস করা হল, মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)
.
উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
নারী এবং পুরুষের নামাযে পার্থক্য -- ৩
----------------------------------------------
রাসূল সা. থেকে সাহাবায়ে কিরাম যে দ্বীন শিখেছেন, তাঁদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হল।
.
✡ তাবেয়ীদের ফাতাওয়া
.

2486- حدثنا هشيم ، قال : أخبرنا شيخ لنا ، قال : سمعت عطاء ؛ سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة ؟ قال : حذو ثدييها(مصنف ابن ابى شيبه، كتاب الصلاة، باب من كان يتم التكبير ولا ينقصه في كل رفع وخفض،)
আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করা হল, নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে? তিনি বললেন, বুক বরাবর। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)
.

2489- حدثنا محمد بن بكر ، عن ابن جريج ، قال : قلت لعطاء : تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل ؟ قال : لا ترفع بذلك يديها كالرجل ، وأشار فخفض يديه جدا ، وجمعهما إليه جدا ، وقال : إن للمرأة هيئة ليست للرجل ، وإن تركت ذلك فلا حرج.
ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে? তিনি বললেন, মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবে না। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৫০৬৬, ৬২৫১)
.

2796- حدثنا جرير ، عن ليث ، عن مجاهد ؛ أنه كان يكره أن يضع الرجل بطنه على فخذيه إذا سجد كما تصنع المرأة.
মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)
.

2487- حدثنا رواد بن جراح ، عن الأوزاعي ، عن الزهري ، قال : ترفع يديها حذو منكبيها.
যুহরী রহ. বলেন, মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)
.

5068 – عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها
হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন, মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবে না যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/৩০৩)
.

2795- حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِِ ، عَنْ مُغِيرَةَ ، عَنْ إبْرَاهِيمَ ، قَالَ : إذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَضُمَّ فَخِذَيْهَا ، وَلْتَضَعْ بَطْنَهَا عَلَيْهِمَا.(مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2795)
ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)
.

5071 – عبد الرزاق عن معمر والثوري عن منصور عن إبراهيم قال كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها على فخذيها إذا سجدت ولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكي لا ترفع عجيزتها
ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন, মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)
.

2799- حَدَّثَنَا إسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ زُرْعَةَ بْنْ إِبْرَاهِيمَ ، عَن خَالِدِ بْنِ اللَّجْلاَجِ ، قَالَ : كُنَّ النِّسَاءُ يُؤْمَرْنَ أَنْ يَتَرَبَّعْنَ إذَا جَلَسْنَ فِي الصَّلاَةِ ، وَلاَ يَجْلِسْنَ جُلُوسَ الرِّجَالِ عَلَى أَوْرَاكِهِنَّ ، يُتَّقي ذَلِكَ عَلَى الْمَرْأَةِ ، مَخَافَةَ أَنْ يَكُونَ مِنْهَا الشَّيءُ.
খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন, মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)
.
উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।
নারী এবং পুরুষের নামাযে পার্থক্য -- ৪
----------------------------------------------
✡ চার ইমামের ফিক্বহের আলোকে
.
ফিক্বহের চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-
১. ফিক্বহে হানাফী
২. ফিক্বহে মালেকী
৩. ফিক্বহে শাফেয়ী
৪. ফিক্বহে হাম্বলী
.
এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।
.
💟 ফ্বিকহে হানাফী
.
احب الينا ان تجمع رجليها من جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل، (كتاب الآثار-1/609)
ইমাম আবু হানীফা রহঃ-এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলেন, আমাদের নিকট পছন্দনীয় হল মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবে না। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ, ১/৬০৯}
.
روى امامنا الأعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال كن يتربعن أمرن أن يحتفزن،
أخرجه أبو محمد الحارثى والأشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثورى عنه، راجع جامع الماسانيد-1/400، وهذا أقوى واحسن ما روى فى هذا الباب، ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه وأخذ به،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা রঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ-কে জিজ্ঞেস করা হল, রাসূল সাঃ-এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন? তিনি বললেন, আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে।
(জামেউল মাসানিদ, ১/৪০০)
.
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন।
(কিতাবুল আসারর টিকা, ১/৬০৭)
.
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুনঃ
১. বাদায়িউস সানায়ে, ১/৪৬৬
২. হেদায়া, ১/১০০-১১০
৩. আল-মাবসূত লিস সারাখসী, ১/৪৬৬
৪. ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৫০৪
৫, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ১/৭৩-৭৫
.
💟 ফিক্বহে মালেকী
.
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল-কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ'এর মত উল্লেখ করেন
وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু, সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবে না। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন।
(আয যাখীরা, ২/১৯৩)
.
💟 ফিক্বহে শাফেয়ী
.
( قال الشافعي ) وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها (كتاب الأم، باب الذكر في السجود)
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন, আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর রাসূল সাঃও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়।
(কিতাবুল উম্ম, ১/১৩৮)
.
💟 ফিক্বহে হাম্বলী
.
ইমাম আহমদ রহঃ-এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ-এর 'আল মুগীনী' কিতাবে।
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হল হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন, তুলনামূলক কম উঠাবে।
দ্বিতীয় মত হল, মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে।
(আল মুগনী, ২/১৩৯)
.
💟 গায়রে মুকাল্লিদ আলিমগণের ফাতওয়া
.
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হল তথা হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন এবং চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমত্যের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছন্ন সূত্র পরম্পরায় যে পার্থক্যের আমল চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।
.
মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবীর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবীকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত, জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন, "এর উপরই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে।" এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করে লিখেন, “মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বিকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ।" (ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা, ২৭-২৮; ফাতওয়ায়ে উলামায়ে আহলে হাদীস, ৩/১৪৮-১৪৯; মাযমুয়ায়ে রাসায়েল, মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর, ১-৩১০-৩১১)
মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে উলামায়ে আহলে হাদিস”-এ এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল, ১/৩০৫)
নারী এবং পুরুষের নামাযে পার্থক্য -- ৫
----------------------------------------------
✡ একটি যুক্তি ও তার খন্ডন
.
আহলে হাদীস নামধারীরা রাসূল সাঃ-এর একটি হাদীস দিয়ে সব সময় দলীল দিয়ে থাকে। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, "তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়।" যেহেতু এ হাদীসে পুরুষ-নারীর কোন পার্থক্য করা হয়নি, তাই নারী-পুরুষের নামাযের অবস্থা একই।
অথচ এ হাদীসটির দিকে তাকালেই তাদের এ দলীলের অসারত স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ হাদীসটি রাসূল সাঃ বলেছিলেন পুরুষ সাহাবীদেরকে। আর রাসূল সাঃ-এর উক্তি "আমাকে যেভাবে দেখ" দ্বারা স্পষ্ট যে, এ হুকুম পুরুষদের জন্য। কারণ মহিলা সাহাবীরা রাসূল সাঃ-কে নামাযরত অবস্থায় দেখে না। তাই তাদের রাসূল সাঃ-এর নামায দেখে নামায শিক্ষা করা সম্ভব নয়।
.
✡ আলবানীর অসার বক্তব্য
.
আশ্চর্যের কথা হল, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে নববী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আলবানী তাঁর “সিফাতুস সালাতে” ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক।" কিন্তু এই দাবির পক্ষে তিনি না কোন আয়াত পেশ করেছেন, না কোন হাদীস। আর কোন সাহাবী বা তাবেয়ীর ফাতওয়া। এহেন বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিলসমূহ বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে (যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে) শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে, হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোন আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি। কিন্তু তার এই কথাটি এক গুয়েমি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদীস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায় না। কেননা প্রথমত আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট; যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে তাহলে মুরসাল হাদীসও সহীহ হাদীসের মত গ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত: যে ইমামগণের নিকট মুরসাল হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন। প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলিম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী” (১/৫২০, দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া)-তে লিখেছেন, “এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য।" তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন "আওনুল বারী", ২/১৫৯
.
পুরুষ-মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত। সেটা হল ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ নাকি বলেছেন, “মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে।" এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নেই। আল্লাহই ভাল জানেন, তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন! অথচ ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ স্পষ্টই মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।
.
আলবানী নিজ দাবী প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হল-ইমাম বুখারী রহঃ-এর রিজালশাস্ত্রের একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছেনঃ
عن ام الدرداء انها كانت تجلس فى الصلاة جلسة الرجل-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন।"
আলবানী খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়। এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হত তাহলে “পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকে না। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসত না। তিনি যেহেতু ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।
.
আরেকটি মজার ব্যাপার হল উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী দলীল পেশ করলেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদিসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করলেন। আশ্চর্য ব্যাপার! সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতোপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গেছে। এবং একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বিশেষ করে যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট এ কথার ইংগিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
.
সুতরাং বুঝা গেল, নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা-- এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত। গায়রে মুকাল্লিদদের বক্তব্যটির কোন দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সত্যকে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন। আমীন।

একটি বিয়ে কি রকম হওয়া চাই..???

বিয়ের সময় অতি তাড়াহুড়ো করবেন না। কারো লেবাস দেখে অথবা সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে কাউকে যাচাই করবেন না। কেননা  একটি বিয়ে একটি জিবনের মোড়...